মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৪নং আপার কাগাবলা ইউনিয়নের আথানগিরি গ্রামের বাসিন্দা গোলাপ মিয়া পিতা: মৃত তোতা মিয়া—এক সময়ের সাধারণ ডিলার থেকে আজ পরিণত হয়েছেন এই ইউনিয়নের “অঘোষিত শাসকে”। ভিজিডি চাল, সার, বীজ, কীটনাশক—সরকারি সব সুবিধা যেন একাই কব্জা করে বসেছেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তার একচ্ছত্র দখলে গড়ে উঠেছে এক ভয়ঙ্কর দুর্নীতির সিন্ডিকেট, যার শিকড় ইউনিয়ন ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক উচ্চপর্যায়ে।
একাধিক সরকারি ডিলারশিপ, একক আধিপত্য, এক দখলদার সিন্ডিকেট!
গোলাপ মিয়া বর্তমানে একাধারে ভিজিডি (১০ টাকা কেজি) চালের ডিলার, সার ডিলার, বীজ ডিলার এবং কীটনাশক ওষুধ বিক্রেতা। একজন ব্যক্তির হাতে একসঙ্গে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবা বছরের পর বছর ধরে কেন্দ্রীভূত থাকা কেবল অনিয়ম নয়—এটি জনস্বার্থের চরম লঙ্ঘন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি পরিচিত ব্যক্তিদের ছাড়া কাউকে সেবা দিতে চান না। অথচ এসব সুবিধা সাধারণ মানুষের করের টাকায় পরিচালিত হয়।
চাল গরিবের নামে বরাদ্দ, বিক্রি হয় বাজারে!
স্থানীয়রা বলছেন, মাসের পর মাস ধরে ভিজিডি কার্ডধারী নারীরা তাদের বরাদ্দকৃত চাল পাচ্ছেন না। অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, সেই চাল নিয়মিতভাবে বাজারে পাইকারি দামে বিক্রি করা হয়। এক গৃহবধূ বলেন, “কার্ড তো আছে, চাল পাই না। দোকানে গিয়ে শুনি—শেষ হয়ে গেছে। পরে দেখি সেই চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে। সবাই জানে কার কাজ—গোলাপ মিয়ার।”
সার-বীজেও বঞ্চনা, হয়রানি ও দখলদারি
সার ও বীজ কিনতে গিয়ে সময়মতো না পাওয়া, দাম বেশি রাখা, পরিচয় না থাকলে অপমানজনক আচরণের শিকার হচ্ছেন অনেক কৃষক। এক যুবক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গোলাপ মিয়া সরকার না, তাও তার কাছে গেলে মনে হয় ভিক্ষা চাইতে গেছি।”
এই দুর্নীতির ছায়া রাজনীতিতে—চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের নাম উঠে আসছে বারবার
স্থানীয়দের অভিযোগ, গোলাপ মিয়া একা নন—তার এই দুঃসাহসিকতা ও সিন্ডিকেটের পেছনে রয়েছেন বিগত সরকারের সময়ের প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন। তার রাজনৈতিক আশীর্বাদেই গোলাপ মিয়া ডিলারশিপ ধরে রেখেছেন এবং নতুন কেউ আবেদন করলেই সেটি নাকচ হয়ে যায়। প্রতিবাদকারী বা প্রতিযোগী কেউ সামনে এলে তাদের হুমকি দেওয়া হয় বা হয়রানির শিকার হতে হয়।
প্রশাসনের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা জানান, “গোলাপ মিয়ার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। কিন্তু তিনি চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় থাকায় কেউ লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পায় না। প্রশাসনও চাপে থাকে।”
ইউনিয়নবাসীর দাবি: অবিলম্বে ডিলারশিপ বাতিল ও দুর্নীতির তদন্ত
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয়দের একটাই দাবি—গোলাপ মিয়ার সকল ডিলারশিপ বাতিল করে, ভিজিডি চাল ও কৃষি উপকরণে চলমান দুর্নীতির স্বাধীন তদন্ত শুরু করা হোক। পাশাপাশি নতুন ডিলারশিপ যেন উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ নিয়োগের মাধ্যমে প্রদান করা হয়—এটাই সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা।
আথানগিরি গ্রামের বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, “গোলাপ মিয়া একজন ব্যক্তি না, উনি একজন চিহ্নিত দখলদার। আর তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা কামাল হোসেন—নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হলেও জনগণের অধিকার হরণে আজ তিনি নিরব দর্শক।”
তার কথায় উঠে আসে গ্রামের মানুষের অভিন্ন কণ্ঠস্বর:
“গোলাপ মিয়ার ডিলারশিপ মানেই দুর্নীতির বৈধতা। আর কামাল হোসেন মানেই—গরিব মারার ছায়ায় দুর্নীতির উৎসব।”
মন্তব্য করুন